মানবাধিকার/Human Rights শব্দটি Human ও Rights শব্দ দুটি নিয়ে গঠিত। Human মানে মানুষ আর Rights মানে অধিকার বা দাবি। এখানে অধিকার বলতে বুঝায় মানুষ কর্তৃক সংরক্ষিত। সুতরাং বলা যায় যে, মানুষ হিসেবে যেসব অধিকার সকলের জন্য প্রযোজ্য তাকে মানবাধিকার বলে।
গাজী শামসুর রহমান বলেছেন, “সকল দেশের, সকল কালের, সকল মানুষের নূন্যতম যে অধিকারগুচ্ছ সার্বজনীনস্বীকৃত স্বরূপ তারই নাম মানবাধিকার।” সোর্স – মানবাধিকার ভাষ্য : গাজী শামসুর রহমান)
মোস্তফা জামান ভুট্রো বলেন, “মানবাধিকার হলো সেই অধিকার যা মানুষের সুস্থ,সুন্দর ও শান্তিময় জীবন-যাপনের নিশ্চয়তা দেয়।”
The New Encyclopedia Britannica তে বলা হয়েছে, “Rights thought to belong to individual under the natural law as a consequence of his being Human”.
সুতরাং এক কথায় বলা যায় যে, মানুষের যেসব অধিকার সার্বজনীনভাবে স্বীকৃতস্বরূপ আর তা কোন মানুষের জন্য খর্ব করা হলে তা হবে চরম অন্যায়, সেই অধিকারগুলো হলো মানবাধিকার।
কয়েকটি মৌলিক মানবাধিকার
নিম্নে কয়েকটি মৌলিক মানবাধিকার দেওয়া হলো –
- মানুষ জন্মগতভাবে স্বাধীন
- স্বাধীনভাবে চলাফেরার করার অধিকার
- শিক্ষা গ্রহণের অধিকার
- খাদ্য গ্রহণের অধিকার
- আইনের চোখে সকলেই সমান
- চিকিৎসা লাভের অধিকার
- বস্ত্র লাভের অধিকার
- ন্যায় বিচার পাবার অধিকার
- নারী-পুরুষ সমান অধিকার
- মত প্রকাশের অধিকার
- নিরাপত্তা লাভের অধিকার ইত্যাদি।
মানবাধিকার দিবস কবে পালিত হয়?
জাতিসংঘ ১৯৪৮ সালের ১০ই ডিসেম্বর মানুষের অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়ে “মানবাধিকার সার্বজনীন ঘোষণাপত্র” অনুমোদন করেছে। এজন্য প্রতি বছর ১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবস পালিত হয়।
বিভিন্ন ধর্মে মানবাধিকারের স্বরুপ
ইসলাম ধর্মে মানবাধিকার
সর্বশেষ একেশ্বরবাদী ধর্ম ইসলাম। এ ধর্মের প্রচারক নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তাঁর উপর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা কতৃক নাজিলকৃত কুরআনুল কারীমের বিভিন্নস্থানে মানবাধিকারের বিস্তৃত বিবরণ রয়েছে। ইসলামে সার্বজনীন মানবাধিকারের বিষয়টি জীবনের সর্বক্ষেত্র ও বিভাগে পরিব্যাপ্ত। ইসলাম মানবজাতিকে শ্রেষ্ঠত্বের গৌরবময় অধিকার ও মর্যাদা প্রদান করেছে। মানুষকে সাম্য, মৈত্রী, ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের মর্মবাণী শুনিয়ে জাতিগত শ্রেষ্ঠত্ব, বংশীয় মর্যাদা, শ্রেণীবৈষম্য ও বর্ণপ্রথার বিলুপ্তি ঘোষণা করেছে। অধীনদের প্রতি সদাচারী ও ন্যায়পরায়ণ হতে শিক্ষা দিয়েছে। আরব-অনারব, সাদা-কালো সবাই একই পিতা-মাতা হজরত আদম (আ.) ও বিবি হাওয়া (আ.)-এর সন্তান। মানুষের মধ্যে মর্যাদার কোনো পার্থক্য হতে পারে না। সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে মানবজাতির সম্মান ও মর্যাদার অধিকার, অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা প্রভৃতি জীবনযাত্রার মৌলিক অধিকার, ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অধিকার, জীবনরক্ষণ ও সম্পদের নিরাপত্তার অধিকার, ব্যক্তিস্বাধীনতা, মতপ্রকাশ ও বাকস্বাধীনতা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, একতা, সংঘবদ্ধ ও সাম্যের অধিকার, হালাল উপার্জনের অধিকার, এতিম, মিসকিন, অসহায় নারী ও শিশুর অধিকার, প্রতিবেশির অধিকার, কৃষক-শ্রমিকের অধিকার, প্রতিবন্ধীদের অধিকার প্রভৃতি সব ব্যাপারেই পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা ও কালজয়ী চিরন্তন আদর্শ হিসেবে ইসলাম মানুষের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণের জন্য সুস্পষ্ট নীতিমালা ও দিকনির্দেশনা প্রদান করেছে।
মহানবী সা: বিদায় হজ্জের ভাষণে এসব উল্লেখিত মানবাধিকারের কথা সংক্ষিপ্ত অথচ স্পষ্ট করে বলে গেছেন।