যে বিশেষ জৈব পরিপোষক সাধারণ খাদ্যে অতি অল্প পরিমাণে থেকে দেহের স্বাভাবিক পুষ্টি ও বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং রোগ প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি করে, তাকে ভিটামিন বলে।
ভিটামিন দুধ, ডিম, মাছ, মাংস, প্রানীদের যকৃৎ, মাছের যকৃৎ নিঃসৃত তেল, মাখন, উদ্ভিজ্জ তেল, বাদাম, ঢেঁকিছাটা চাল, লাল আটা, ছোলা, মুগ, বীট, গাজর, মটরশুঁটি, পালংশাক, টমেটো, বাঁধাকপি, ফুলকপি, লেবু, আম, আমলকি, আপেল ইত্যাদিতে পাওয়া যায়। ভিটামিনের এই সব উৎসের মধ্যে দুধ, ডিম, পালংশাক, টমেটো, মটরশুঁটি, কলা, আপেল ইত্যাদিতে বেশীর ভাগ ভিটামিন পাওয়া যায়। ভিটামিন এ এবং ডি এর উৎস মোটামুটি এক, যেমন : কড্, হ্যালিবাট যকৃত নিঃসৃত তেল (লিভার অয়েল), মাখন, দুধ, ডিম,গাজর, বাঁধাকপি, ইত্যাদি।
ভিটামিন কয় প্রকার ও কি কি?
দ্রবণীয় গুণের উপর ভিত্তি করে ভিটামিনকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়–
১। চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন–
- ভিটামিন ‘এ’ বা রেটিনল।
- ভিটামিন ‘ডি’ বা কেলসিফেরল।
- ভিটামিন ‘ই’ বা টোকোফেরল এবং
- ভিটামিন ‘কে’ বা ন্যাপথোকুইনন
২। পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন–
- ভিটামিন ‘বি’ কমপ্লেক্স (B1, B2, B6, B7, B12 ইত্যাদি)
- ভিটামিন ‘সি’ বা অ্যাসকরবিক এসিড।
বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন এর কাজ
নিম্নে বিভিন্ন প্রকার ভিটামিনের কাজ আলোচনা করা হলো–
ভিটামিন ‘এ’ এর কাজ :
১. রাতকানা ও অন্ধত্ব প্রতিরোধ করা।
২. চর্মরোগের হাত থেকে দেহকে রক্ষা করা।
৩. চামড়ার শুষ্ক ও খসখসে ভাব দূর করা।
ভিটামিন ‘বি’ এর কাজ :
১. দেহের বৃদ্ধি ও রক্ত কোষ গঠন করা।
২. রুচি বৃদ্ধি ও পরিপাক শক্তি বৃদ্ধি করা।
৩. বেরিবেরি, পেলেগ্রা ও অ্যানিমিয়া প্রভৃতি রোগ প্রতিরোধ করা।
৪. স্নায়ুকোষ ও স্নায়ুতন্ত্রের সুস্থতা বিধান করা।
ভিটামিন ‘সি’ এর কাজ :
১. লোহিত রক্তকণিকা ও অনুচক্রিকা গঠনে সহায়তা করা।
২. দেহের রোগ প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি করা।
৩. দাঁতের মাড়ির সুস্থতা রক্ষা করা।
৪. কোষের বিপাকক্রিয়ায় সহায়তা করা।
ভিটামিন ‘ডি’ এর কাজ :
১. অস্থির গঠনে সহায়তা করা।
২. দাঁতের গঠন ও বৃদ্ধিতে সহায়তা করা।
৩. রিকেট রোগ প্রতিরোধ করা।
৪. ফসফরাস ও ক্যালসিয়ামের বিপাক নিয়ন্ত্রণ করা।
৫. প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থির কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করা।
৬. দেহে ক্যালসিয়ামের ভারসাম্য রক্ষা করা।
ভিটামিন ‘ই’ এর কাজ :
১. প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করা।
২. মাতৃস্তনে দুগ্ধ ক্ষরণ বৃদ্ধি করা।
৩. সন্তান উৎপাদন শক্তি বৃদ্ধি করা এবং বন্ধ্যাত্ব প্রতিরোধ করা।
৪. জরায়ুর মধ্যে ভ্রুণের বৃদ্ধিতে সহায়তা করা।
৫. গর্ভপাত রোধ করা।
ভিটামিন ‘কে’ এর কাজ :
১. রক্তপাতের প্রবণতা হ্রাস করা।
২. যকৃতের ক্ষয় রোধ করা।
ভিটামিন এর অভাবজনিত রোগ
১। ভিটামিন ‘এ’-এর অভাবে কী কী অসুবিধা দেখা দেয়?
ভিটামিন ‘এ’-এর অভাবে মানবদেহে নানাবিধ অসুবিধা হতে পারে। যেমন–
১. ভিটামিন ‘এ’-এর অভাব হলে রোগী কম আলোতে বিশেষ করে রাতে আবছা আলোতে দেখতে পায় না। এটি রাতকানা রোগ বলে পরিচিত।
২. ভিটামিন ‘এ’-এর অভাব হলে চোখের কর্নিয়ার আচ্ছাদান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই রোগটি জেরপথালামিয়া নামে পরিচিত।
৩. ভিটামিন ‘এ’-এর অভাব ঘটলে দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
৪. সর্দি, কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা ইত্যাদি রোগ ভিটামিন ‘এ’-এর অভাব হলে হতে পারে।
২। ভিটামিন বি (B)-এর অভাবজনিত রোগ
ভিটামিন বি পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিনগুলোর মধ্যে অন্যতম। বেশ কয়েকটি ভিটামিনের সমন্বয়ে বি-কমপ্লেক্স গঠিত। এই ভিটামিনের অভাবে বিভিন্ন ধরনের রোগ দেখা দেয়। বি-কমপ্লেক্স এর অভাবজনিত রোগগুলোর মধ্যে বেরিবেরি, মুখে ও ঠোঁটের কোনায় ঘা, পেলেগ্রা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এই রোগগুলো যথাক্রমে বি১ বি২ ও নায়াসিনের অভাবে হয়ে থাকে।
৩। ভিটামিন সি (C) এর অভাবজনিত রোগ
ভিটামিন সি একটি পানিতে দ্রবনীয় ভিটামিন। দীর্ঘদিন ধরে ভিটামিন সি’এর অভাবের ফলে যে রোগ দেখা যায় তার নাম স্কার্ভি (Scurvy)। যে কোন ব্যক্তি যদি ২-৩ মাস ধরে কোন প্রকার তাজা বা টাটকা শাক-সবজি ও ফল খাওয়া থেকে বিরত থাকে তাহলে তার স্কার্ভি দেখা দিবে। যে কোন বয়সেই ভিটামিন সি এর অভাবে স্কার্ভি রোগ দেখা দিতে পারে। তবে কিশাের বয়সে, গর্ভবতী ও স্তন্যদাত্রী মায়েদের মধ্যে স্কার্ভি বেশি দেখা যায়।
যে যে কারণে খাদ্যে ভিটামিন সি এর অভাব দেখা যায়ঃ
টাটকা ফল ও সবজি প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় না থাকলে কিছু দিনের মধ্যেই ভিটামিন ‘সি’ এর অভাব দেখা দিবে।
শহরের বাসিন্দারা টাটকা শাক-সবজি ও ফলমূল পায় না তাদের মধ্যেও স্কার্ভি দেখা দিতে পারে।
যারা টিনের মধ্যে সংরক্ষিত খাবার খেয়ে থাকেন এবং টাটকা খাবার একেবারেই বর্জন করেন তাদের মধ্যেই ভিটামিন ‘সি’ এর অভাব দেখা দিতে পারে।
বৃদ্ধ ব্যক্তিরা যারা কাঁচা ও টাটকা ফল বা খাবার খেতে পারেন না তাদেরও ভিটামিন সি-এর অভাব হতে পারে।
ভিটামিন সম্পর্কিত আরও প্রশ্ন ও উত্তর
১। ভিটামিন ‘ডি’ এর অভাবে কী রোগ হয়?
উত্তর : ভিটামিন ‘ডি’ এর অভাবে শিশুর রিকেটস রোগ হয়।
২। বিটা-ক্যারোটিন কী?
উত্তর : বিটা-ক্যারোটিন এক ধরনের ভিটামিন-এ।
৩। ভিটামিন ‘এ’-এর কাজ কী কী?
উত্তরঃ ভিটামিন ‘এ’-এর কাজগুলো হলোঃ
দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক রাখে এবং রক্তের স্বাভাবিক অবস্থা বজায় রাখে।
এই ভিটামিন চোখের রোডোপসিন রঞ্জক পদার্থ তৈরিতে সাহায্য করে।
কার্বোহাইড্রেট বিপাকে সহায়তা করে।
আবরণী কলার অখণ্ডতা রক্ষায় কাজ করে।
৪। ভিটামিনকে জৈবিক প্রভাবক বলা হয় কেন?
উত্তরঃ ভিটামিনসমূহ প্রত্যক্ষভাবে দেহ গঠনে অংশগ্রহণ না করলেও এদের অভাবে দেহের ক্ষয়পূরণ, বৃদ্ধিসাধন বা দেহে তাপ ও শক্তি উৎপাদন ইত্যাদি ক্রিয়াগুলো সুসম্পন্ন হতে পারে না। জীবদেহের বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ ক্রিয়াকলাপ এদের সাহায্যে নিয়ন্ত্রিত হয় বলে ভিটামিনসমূহকে জৈবিক প্রভাবক বলা হয়।
Tags :
- ভিটামিন কি বা কাকে বলে?
- ভিটামিন এ এর অপর নাম কি?
- ভিটামিন ই এর কাজ কি?
- ভিটামিন এ কে আবিষ্কার করেন?
- হাইপার ভিটামিনোসিস বলতে কী বোঝো?
- ভিটামিনের কাজ কি?
- ভিটামিন এর অভাবে কি হয়?
- ভিটামিন কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি?
- পানিতে দ্রবীভূত ভিটামিন কত প্রকার ও কি কি?
- প্রো ভিটামিন বলতে কী বোঝায়?
- ভিটামিন কত প্রকার ও কি কি?
- ভিটামিন কত রকমের হয়?
- ভিটামিন বি২ এর অপর নাম কি?
- ভিটামিন বি কত প্রকার?
- ভিটামিন বি এর রাসায়নিক নাম কি?
- ভিটামিন ডি এর কাজ কি?
- প্রো ভিটামিন কি?
- ভিটামিন কে আবিষ্কার করেন?
- অ্যান্টি ভিটামিন কাকে বলে?