নিউক্লিয়াস কি? (What is nucleus of a cell in Bengali/Bangla?)
নিউক্লিয়াস (Nucleus) হল প্রোটোপ্লাজমের সবচেয়ে ঘন, পর্দাঘেরা এবং প্রায় গোলাকার একটি অংশ, যা কোষের সব জৈবনিক ক্রিয়া বিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। একে কেন্দ্রিকাও বলা হয়। লিউয়েন হুক (Lewaen hook) সর্বপ্রথম ১৯৬৭ সালে কোষে নিউক্লিয়াস দেখতে পান এবং এর নামকরণ করেন। তিনিই এটি আবিষ্কার করেন সর্বপ্রথম। এটি ৪টি অংশে বিভক্ত।
নিউক্লিয়াসের গঠন (Structure of nucleus)
এর আকৃতি গোলাকার, ডিম্বাকার, নলাকার, উপবৃত্তাকার, প্যাঁচানো থালার মত এবং শাখান্বিত হতে পারে। রাসায়নিকভাবে নিউক্লিয়াস মূলত প্রোটিন ও নিউক্লিক এসিড দ্বারা গঠিত। এতে অন্যান্য উপাদানও থাকে। যেমনঃ প্রোটিন (Protein), আরএনএ (RNA), ডিএনএ (DNA)। সিভকোষ বা লোহিত রক্তকণিকায় নিউক্লিয়াস থাকে না৷ নিউক্লিয়াসে বংশগতির বৈশিষ্ট্য নিহিত৷ এটি কোষে সংঘটিত বিপাকীয় কার্যাবলিসহ সব ক্রিয়া-বিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে৷ সুগঠিত নিউক্লিয়াসে নিচের অংশগুলো দেখা যায়:
১. নিউক্লিয়ার ঝিল্লি (Nuclear membrane)
২. নিউক্লিওপ্লাজম (Nucleoplasm)
৩. নিউক্লিওলাস (Nucleolus)
৪. ক্রোমাটিন জালিকা (Chromatin reticulum)
১. নিউক্লিয়ার ঝিল্লি (Nuclear membrane)
নিউক্লিয়ার ঝিল্লী দ্বিস্তর বিশিষ্ট অঙ্গাণু যা সুকেন্দ্রিক কোষ নিউক্লিয়াসকে ঘিরে থাকে যা বংশাণুসমগ্রকে ঘিরে থাকে। এ ঝিল্লি লিপিড ও প্রোটিন সমন্বয়ে গঠিত।
ঝিল্লির মধ্যবর্তী স্থানকে পেরিনিউক্লিয়ার স্পেস বলে। এটি সাধারণত প্রায় ১০-৫০ ন্যানোমিটার চওড়া হয়। বাইরের পারমাণবিক ঝিল্লি এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম ঝিল্লির সাথে অবিচ্ছিন্ন থাকে। নিউক্লিয়ার ঝিল্লিতে অনেকগুলি নিউক্লিয়ার রন্ধ্র রয়েছে যা উপাদানগুলিকে সাইটোসল এবং নিউক্লিয়াসের মধ্যে উপাদানসমূহ স্থানান্তর করতে দেয়। ইন্টারমিডিয়েট ফিলামেন্ট প্রোটিন যা ল্যামিন নামে পরিচিত তা অভ্যন্তরীণ নিউক্লিয়ার ঝিল্লির অভ্যন্তরীণ দিকের নিউক্লিয়াস লেমিনা নামে একটি কাঠামো তৈরি করে এবং নিউক্লিয়াসকে কাঠামোগত সমর্থন দেয়।
২. নিউক্লিওপ্লাজম (Nucleoplasm)
নিউক্লিয়ার ঝিল্লির ভিতরে জেলির মতাে বস্তু বা রস থাকে, একে কেন্দ্রিকারস বা নিউক্লিওপ্লাজম বলে। একে ক্যারিওলিম্ফও বলা হয়। নিউক্লিওপ্লাজম মূলত প্রােটিন দিয়ে তৈরি। নিউক্লিওপ্লাজমে নিউক্লিক এসিড, উৎসেচক ও কতিপয় খনিজ লবণ থাকে। এছাড়াও এতে রয়েছে RNA।
৩. নিউক্লিওলাস (Nucleolus)
নিউক্লিওপ্লাজমের মধ্যে ক্রোমােজোমের সাথে সংলগ্ন গােলাকার বস্তুকে নিউক্লিওলাস বা কেন্দ্রিকাণু বলে। ক্রোমােজোমের রং অগ্রাহী অংশের সাথে এরা লেগে থাকে। এরা RNA ও প্রােটিন দিয়ে তৈরি হয়। এরা রাইবােজোম সংশ্লেষণ করে।
৪. ক্রোমাটিন জালিকা (Chromatin reticulum)
কোষের বিশ্রামকালে অর্থাৎ যখন কোষ বিভাজন চলে না, তখন নিউক্লিয়াসে কুণ্ডলী পাকানাে সূক্ষ্ম সুতার মতাে অংশই হচ্ছে ক্রোমাটিন জালিকা বা নিউক্লিয়ার রেটিকুলাম। কোষ বিভাজনের সময় এরা মােটা এবং খাটো হয়, তাই তখন তাদের আলাদা আলাদা ক্রোমােজোম হিসেবে দেখা যায়। ক্রোমােজোমে অবস্থিত জিনগুলাে বংশগতির গুণাবলি বহন করে এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে নিয়ে যায়। কোনাে একটি জীবের ক্রোমােজোম সংখ্যা ঐ জীবের জন্য নির্দিষ্ট। এসব ক্রোমােজোমে বংশধারা বহনকারী জিন (gene) অবস্থান করে এবং বংশের বৈশিষ্ট্য বংশপরম্পরায় বহন করা ক্রোমােজোমের কাজ।
নিউক্লিয়াসের কাজ (Function of nucleus)
নিউক্লিয়াস কোষের সবধরনের কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। এতে ক্রোমোসোম ও DNA থাকে যার দ্বারা বংশ পরম্পরায় জীবের বৈশিষ্ট্য রক্ষা পায়। নিউক্লিয়ার মেমব্রেন সাইটোপ্লাজম এর সাথে নিউক্লিয়াসের বিভিন্ন বস্তুর যোগাযোগ রক্ষা করে। নিউক্লিয়ার রন্ধ্রের মাধ্যমে বিভিন্ন বস্তুর আগমন ও নির্গমন নিয়ন্ত্রিত হয়। নিউক্লিওলাস নিউক্লিক অ্যাসিড এর ভান্ডার হিসাবে কাজ করে। নিউক্লিওলাস রাইবোসোম প্রস্তুত করে। নিউক্লিওলাস প্রোটিন সংশ্লেষণ ও সংরক্ষণ করে। নিউক্লিওলাস বিভিন্ন প্রকার RNA সংশ্লেষণ করে। বিক্রিয়ার ও বংশগতি উপাদানের কর্মকাণ্ডের প্রধান মাধ্যম হিসাবে নিউক্লিওপ্লাজম কাজ করে। ক্রোমোসোম বংশগতি বৈশিষ্টের ধারক ও বাহক হিসাবে কাজ করে। ক্রোমোসোম মিউটেশন, প্রকরণ সৃষ্টি ইত্যাদি কাজে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। ক্রোমোসোম প্রজাতির বিবর্তনে মুখ্য ভূমিকা পালন করে।
Tags :
- নিউক্লিয়ার ঝিল্লীর গঠন কীরূপ?