সুর : একটিমাত্র কম্পাঙ্কবিশিষ্ট শব্দকে সুর বলে। কোন সুর শলাকা থেকে উৎপন্ন শব্দকে সুর বলা হয়। যেমন: বাঁশীর সুর, হারমোনিয়ামের সুর, বীণার সুর, তানপুরার সুর, এসরাজের সুর ইত্যাদি। অনেকে চলতি কথায় শাস্ত্রীয় রাগগুলিকেও সুর বলে থাকেন। যেমন: বিলাবল সুর, ভৈরবী সুর, ইমন সুর, বেহাগ সুর ইত্যাদি।
স্বর : একাধিক কম্পাঙ্কবিশিষ্ট শব্দকে স্বর বলা হয়। বাদ্যযন্ত্র থেকে যে শব্দ নিঃসৃত হয় তা স্বর। অর্থাৎ স্বর হলো একাধিক সুরের সমষ্টি । যে কথা বলি তা হচ্ছে স্বর।
শব্দ স্বরের বৈশিষ্ট্য
শব্দ স্বরের তিনটি প্রধান বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যথা :
১. প্রাবল্য বা তীব্রতা
২. তীক্ষ্মতা
৩. গুণ বা জাতি।
১. প্রাবল্য : প্রাবল্য দ্বারা শব্দ কতটা জোরে হয় তা বুঝায়। প্রামাণ্য সংজ্ঞা হিসেবে বলা যায়, শব্দ বিস্তারের অভিমুখে লম্বভাবে রাখা একক ক্ষেত্রফলের মধ্য দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে যে পরিমাণ শব্দ শক্তি প্রবাহিত হয় তাকে শব্দের প্রাবাল্য বা তীব্রতা বলে।
২. তীক্ষ্ণতা : এটি দ্বারা একই প্রাবল্যের খাদের সুর ও চড়া সুরের মধ্যে পার্থক্য বুঝা যায়।
৩. গুণ বা জাতি : এ বৈশিষ্ট্য দ্বারা বিভিন্ন উৎস হতে উৎপন্ন একই প্রাবল্য ও তীক্ষ্মতাযুক্ত শব্দের মধ্যে পার্থক্য বুঝা যায়।
সঙ্গীতে স্বর -এর প্রয়োজনীয়তা
বাংলা, ইংরেজি বা যে কোন বিদ্যা শিখতে হলে কতকগুলি বর্ণ বা অক্ষরের সাথে প্রথমে পরিচিত হতে হয়। পরে, একাধিক বর্ণ বা অক্ষরের সংযোগে এক-একটি অর্থবোধক শব্দ এবং কয়েকটি শব্দের সংযোগে এক-একটি অর্থবোধক বাক্যের সৃষ্টি হয়, সঙ্গীত বিদ্যাতেও তেমনি কতকগুলি স্বর ব্যবহৃত হয় এবং পরে স্বর হতে সপ্তক, সপ্তক হতে ঠাট, ঠাট হতে রাগের সৃষ্টি হয়। অতএব, বিদ্যা বা ভাষায় যেমন বর্ণ বা অক্ষরের প্রয়োজন, সঙ্গীতেও ঠিক তেমনি স্বরের প্রয়োজন অপরিসীম।
স্বরগুলির শাস্ত্রীয় নামগুলি নিম্নে প্রদান করা হলো:
সা – ষড়জ / খরজ
রে – ঋষভ / রেখাব
গা – গান্ধার
মা – মধ্যম
পা – পঞ্চম
ধা – ধৈবৎ
নি – নিষাদ / নিখাদ
স্বর কয়টি ও কি কি? স্বর-এর শ্রেনীবিভাগসমূহ বর্ণনা
বাংলা ভাষায় যেমন ১২ টি স্বরবর্ণ ও ৪৮ টি ব্যঞ্জনবর্ণ, ইংরেজিতে ২৬ টি বর্ণ বা অক্ষর ও আরবীতে ৩০ টি হরফ আছে, তেমনি সঙ্গীতেও সর্বমোট ১২ টি স্বর আছে। বাংলা ভাষায় যেমন স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ এবং ইংরেজী ভাষায় অর্থাৎ দুই জাতীয় বর্ণ বা অক্ষর আছে, সঙ্গীতের স্বরগুলির মধ্যেও তেমনি প্রকারভেদ আছে। সঙ্গীতের এই ১২ টি স্বরকে ২ ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। (ক) শুদ্ধ স্বর ও (খ) বিকৃত স্বর
শুদ্ধস্বর ও বিকৃতস্বর:
(ক) কোন একটি নির্দিষ্ট সুরকে সা ধরে, ঐ সা থেকে রে, রে হতে গা, মা হতে পা, পা হতে ধা এবং ধা হতে নি স্বরগুলি পূর্ণান্তরে (একটি বাদে একটি রূপে) অবস্থিত হলে, সেই স্বরগুলি হয় শুদ্ধ স্বর। শুদ্ধ স্বরগুলি হলো ৭ টি, যথা: স, র, গ, ম, প, ধ ও ন
(খ) প্রতি দুটি স্বরের মধ্যে বাদ দেয়া অর্ধান্তরে অবস্থিত স্বরগুলি হয় বিকৃত স্বর। কিন্তু গা ও মা এবং শুদ্ধ নি ও সা স্বর দুটি পাশাপাশি অর্ধান্তরে অবস্থিত। বিকৃত স্বর ৫ টি, যথা: রে (ঋ), গা (জ্ঞ), মা (ক্ষ), ধা (দ) ও নি (ণ)। কিন্তু এই বিকৃত স্বর আবার দুই ভাগে বিভক্ত, যথা: (ক) কোমল স্বর ও (খ) কড়ি স্বর। কোমল স্বর ৪ টি, যথা: ঋ, জ্ঞ, দ ও ণ এবং কড়ি স্বর ১ টি, সেটি হলো ক্ষ। অর্থাৎ ক্ষা স্বরটিকে কড়ি বলতে হবে এবং বাকী ৪ টি স্বরকে কোমল বলতে হবে।
সুর ও স্বরের পার্থক্য কি?
সুর ও স্বরের পার্থক্যগুলো নিম্নরূপ :
সুর
- একটিমাত্র কম্পাঙ্ক বিশিষ্ট শব্দকে সুর বলে।
- শব্দ সৃষ্টিকারী উৎসের সরল ছন্দিত স্পন্দনের জন্য সুর সৃষ্টি হয়।
- উদাহরণ : সুরশলাকার শব্দ।
স্বর
- একাধিক কম্পাঙ্ক বিশিষ্ট শব্দকে স্বর বলে।
- শব্দ সৃষ্টিকারী উৎসের পর্যায়বৃত্ত গতির জন্য স্বর সৃষ্টি হয়।
- উদাহরণ : বেহালা, ভায়োলিন, হারমোনিয়াম এর শব্দ।
Tags :
- স্বর কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি
- সংগীতে স্বর কাকে বলে
- মূল সুর কাকে বলে
- অচল স্বর কাকে বলে
- স্বর কি