ইন্টারনেটের কারণে আমাদের জীবনে অনেক নতুন নতুন সুযোগ-সুবিধার সৃষ্টি হয়েছে, ঠিক সেইরকম সাইবার ক্রাইম নামে সম্পূর্ণ নতুন এক ধরনের অপরাধের জন্ম হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি এবং ইন্টারনেট ব্যবহার করে এই অপরাধগুলো করা হয় এবং অপরাধীরা সাইবার অপরাধ করার জন্য নিত্য নতুন পথ আবিষ্কার করে যাচ্ছে। আজকে আমাদের আর্টিকেলের বিষয় সাইবার ক্রাইম সম্পর্কে। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে যা জানা যাবে–
- সাইবার ক্রাইম বা সাইবার অপরাধ কি?
- সাইবার ক্রাইম কত প্রকার ও কি কি?
- কয়েকটি সাইবার ক্রাইম এর উদাহরণ;
সাইবার ক্রাইম কি? (What is Cyber Crime in Bengali/Bangla?)
সাইবার ক্রাইম হচ্ছে কম্পিউটার, ইন্টারনেট, মোবাইল ফোন বা যে কোন ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস এর মাধ্যমে যে কোন ধরনের অনৈতিক কাজ সম্পাদন করা। যারা সাইবার ক্রাইম করে তাদেরকে Cyber Terrorists বলে।
ইন্টারনেটের মাধ্যমে কারো ধর্মীয় বা ব্যক্তিগত অনুভূতিতে আঘাত দেয়া, অনলাইনের মাধ্যমে কারো ব্যক্তিগত তথ্য যেমন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, ক্রেডিট কার্ড পাসওয়ার্ড ইত্যাদি চুরি করা, Virus বা Spam ছড়ানো, ইন্টারনেটের মাধ্যমে হুমকি দেওয়া, সাইবার পর্নোগ্রাফি, অনলাইনে ডিভাইসের মাধ্যমে কারো আপত্তিকর ছবি বা ব্যক্তিগত তথ্য ছড়ানো ইত্যাদি সবই সাইবার ক্রাইমের উদাহরণ।
সাইবার ক্রাইমের ধরণ (Kinds of Cyber Crime)
হ্যাকিং (Hacking)
অনুমতি ছাড়া কোন কম্পিউটার নেটওয়ার্কে প্রবেশ করে কম্পিউটার ব্যবহার করা অথবা কোন কম্পিউটারকে মোহচ্ছন্ন করে তার পুরো নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়াকে হ্যাকিং বলে। ইন্টারনেটের ব্যাপক প্রচলনের ফলে যেমনি তথ্যের আদান প্রদান বেড়ে গেছে বহুগুণ ঠিক তেমনি তথ্য গায়েব, তথ্য চুরি এবং পথিমধ্যে তথ্য বিকৃতি ঘটানোর নজিরও লক্ষ্য করা যায়। আর এ কাজটি যারা করছে মূলত তাদের হ্যাকার বলে অভিহিত করা হয়।
কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের সিস্টেমের সিকিউরিটির পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য হ্যাকার নিয়োগ করেন। এই নিয়োগ প্রাপ্ত হ্যাকারদের কাজকে বৈধ হ্যাকিং বলে। এরা সিস্টেম সিকিউরিটি চেক করে; তবে সিস্টেমের কোন ক্ষতি করে না। এদেরকে হোয়াইট হ্যাট হ্যাকার বলা হয়। অবৈধ হ্যাকার বা ক্রেকাররা ইন্টারনেট এবং অন্যান্য নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ডেটা চুরি অথবা নষ্ট করে দেয়। এদেরকে ব্লাক হ্যাট হ্যাকার বলে।
হ্যাকিং এর উদ্দেশ্য : হ্যাকিং এর মূল উদ্দেশ্য হলো কোনো ব্যক্তির তথ্যের ক্ষতিসাধন করা কিংবা সিস্টেমের ক্ষতি করা আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ত্রুটি জানান দেওয়া।
হ্যাকিং প্রতিরোধ : ইনফরমেশন সিস্টেমে হ্যাকিং প্রতিরোধে বেশ কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। নিচে এগুলো আলোচনা করা হলো–
- কোনো প্রতিষ্ঠানের ডেটার নিরাপত্তার জন্য প্রতিষ্ঠানের সমুদয় ডেটাকে বিভিন্ন ক্যাটেগরিতে ভাগ করে প্রত্যেক ক্যাটেগরির ডেটার নিরাপত্তার দায়ভার অন্তত দু’জন ব্যক্তির উপর চাপিয়ে দেয়া যায়। ডেটা চুরি হলে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা রাখতে হবে। প্রতিষ্ঠানের সব ব্যক্তির সব ধরনের ফাইলে প্রবেশের স্বাধীনতা খর্ব করতে হবে।
- ওয়েবসাইটে হ্যাকারদের অযাচিত কর্মকাণ্ড রোধে সবসময় নেটওয়ার্কের ওয়ার্কস্টেশন, সার্ভার প্রভৃতি ভালভাবে চেক করতে হবে। বিভিন্ন সন্দেহজনক টেক্সটগুলো সার্চ করা উচিত।
- অধিকাংশ সময়ই হ্যাকাররা ম্যাক্রো ভাইরাস ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়, এগুলো নির্মূলে প্রয়োজনীয় এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার হাতের কাছে রাখতে হবে।
- শক্তিশালী এনক্রিপশন টেকনিক (সিক্রেট কী ও মূল ডেটার সমন্বয়ে তৈরি) ব্যবহার করে ডেটাকে হ্যাকারদের কাছে দুর্বোধ্য করা যায়। অ্যালগরিদম বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সুপরিচিত DES বা IDEA কে গ্রহণ করা উচিত। সাধারণ এনক্রিপশন টেকনিকগুলো সময়ে সময়ে পরিবর্তন করে প্রয়োগ করা প্রয়োজন।
- ইন্টারনেট ও ল্যানের মাঝখানে ফায়ারওয়াল সেটআপ এবং সঠিকভাবে কনফিগার করতে হবে।
- হ্যাকার ধরতে বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহার করা যায়। যেমন, ISS এর তৈরি ‘রিয়েল সিকিউর’ সফটওয়্যার। এতে একটি ডেটাবেজের মধ্যে প্রচলিত সব হ্যাকিং কৌশলগুলো রক্ষিত থাকে এবং কোন হ্যাকারের কর্মকাণ্ড ডেটাবেসের কোন কৌশলের সাথে মিলে গেলেই সফটওয়্যারটি তৎক্ষনাৎ প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ইমেইলের মাধ্যমে হ্যাকারের উপস্থিতি জানিয়ে দেয়।
- ইন্টারনেটে প্রয়োজনীয় ওয়েবসাইট, নিউজ গ্রুপ ও মেইলিং লিস্টের সাহায্যে হ্যাকারদের গতিবিধি লক্ষ্য রাখতে হবে।
স্প্যামিং (Spamming)
স্প্যামিং হচ্ছে তথ্য প্রযুক্তির সুবিধা ব্যবহার করে অপ্রয়োজনীয় ও ক্ষতিকর মেসেজ প্রচার করা। স্প্যামিং এর মাধ্যম হতে পারে ই-মেইল, মোবাইল ফোন, ইন্সট্যান্ট মেসেঞ্জার ইত্যাদি।
প্লেজিয়ারিজম (Plagiarism)
অন্যের লেখা চুরি করে নিজের নামে চালিয়ে দেওয়া বা প্রকাশ করাকেই বলা হয় প্লেজিয়ারিজম। অর্থাৎ তথ্যসূত্র উল্লেখ না করে কোন ছবি, অডিও, ভিডিও এবং তথ্য ব্যবহার করা অন্যায় কাজ ও অপরাধ হলো প্লেজিয়ারিজম। তাই প্লেজিয়ারিজম একটি বেআইনী কাজ।
সাইবার সন্ত্রাস/সাইবার বুলি (Cyber bully)
তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কোন ব্যক্তিকে জোরপূর্বক কোন কিছু করতে বাধ্য করাকে সাইবার সন্ত্রাস বা সাইবার বুলিং বলা হয়।
স্পুফিং (Spoofing)
স্পুফিং শব্দের অর্থ হলো প্রতারণা করা, ধোঁকা দেওয়া বা কূট কৌশল অবলম্বন করা। নেটওয়ার্ক সিকিউরিটির ক্ষেত্রে স্পুফিং আক্রমণ হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে কোন ব্যক্তি বা কোন একটি প্রোগ্রাম মিথ্যা বা ভুল তথ্য উপস্থাপনের মাধ্যমে নেটওয়ার্ককে বিভ্রান্ত করে এবং এর সিকিউরিটি সিস্টেমে অনুপ্রবেশ করে অনৈতিকভাবে সুবিধা আদায় করে।
ফিশিং (Phishing) ও ভিশিং (Vishing)
ইলেকট্রোনিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় বা ইন্টারনেটে কোন নির্ভরযোগ্য বা বিশ্বাসযোগ্য বিদ্বেষপরায়ণ হয়ে ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডের বিস্তারিত তথ্য, ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ডের মত সংবেদনশীল তথ্য চুরির প্রচেষ্টাকে ফিশিং (Phishing) বলে। মোবাইল, টেলিফোন, ইন্টারনেটভিত্তিক বিভিন্ন ফোন বা অডিও ব্যবহার করে ফিশিং করাকে ভিশিং (Vishing) বা ভয়েস ফিশিং (Voice phishing) বলা হয়।
স্নিকিং (Sneaking)
গোপনে ব্যবহারকারীর চোখ এড়িয়ে কম্পিউটার বা নেটওয়ার্ক সিস্টেমে প্রবেশ করে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি নিজের আওতায় নিয়ে আসাকে স্নিকিং (Sneaking) বলে।
সাইবার ক্রাইম সম্পর্কিত আরও প্রশ্ন ও উত্তর
১। ইন্টারনেট ব্যবহার করে অন্য ব্যক্তির ডেটা চুরি বা ধ্বংস করে দেওয়াকে কী বলে?
উত্তর : হ্যাকিং।