লাইসোজোম (Lysosome) এক ধরনের কোষীয় অঙ্গাণু, যা সাধারণত প্রাণী কোষে পাওয়া যায়। এই অঙ্গাণুটি লাইসোজোম নামক এনজাইম ক্ষরণ করে জীবকোষকে জীবাণুর হাত থেকে রক্ষা করে। এর উৎসেচক আগত জীবাণুগুলোকে হজম করে ফেলে। এর পরিপাক করার উৎসেচকগুলো একটি পর্দা দিয়ে আলাদা করা থাকে, তাই অন্যান্য অঙ্গাণু এর সংস্পর্শে এলেও হজম হয় না। দেহে অক্সিজেনের অভাব হলে বা বিভিন্ন কারণে লাইসোজোমের পর্দা ক্ষতিগ্রস্ত হলে তখন এর আশেপাশের অঙ্গগুলো নষ্ট হয়ে যায়। কখনো কোষটিই মারা যায়।
লাইসোজোমের গঠন
লাইসোজোম সাধারণত বৃত্তাকার, এদের ব্যাস সাধারণত ০.২-০.৮ মিলি মাইক্রন। বৃক্ক কোষের লাইসোজোম অপেক্ষাকৃত বড় হয়ে থাকে। প্রতিটি লাইসোজোম একটি দ্বিস্তরবিশিষ্ট আবরণী দ্বারা আবদ্ধ থাকে। আবরণী ঝিল্লি লিপোপ্রোটিন নির্মিত। ঝিল্লি দ্বারা আবদ্ধ অবস্থায় এতে প্রায় ৪০ ধরনের এনজাইম থাকে।
লাইসোজোমের কাজ
- লাইসোজোম পিনোসাইটোসিস ও ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় অনুপ্রবেশিত জীবাণু বা খাদ্য উপাদানকে আত্মীকরণ করে বিভিন্ন এনজাইমের সাহায্যে বিগলিত করে।
- কোষ বা দেহ প্রতিকূল অবস্থায় পতিত হলে সম্পূর্ণ কোষ বা দেহকে ধ্বংস করে দেয়, একে অটোলাইসিস (autolysis) বলে। রূপান্তরের (metamorphosis) সময় লাইসোজোম দেহের অংশ বিশেষের (যেমন- ব্যাঙাচির লেজের অবলুপ্তির সময়) অবলুপ্তিতে অংশ নেয়।
- প্রতিকূল পরিবেশে কোন কোন উপবাসী (starving) কোষে রাইবোজোম, মাইটোকন্ড্রিয়া এবং এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামের অংশবিশেষ একত্রিত হয়ে পর্দাবেষ্টিত একটি গহ্বর গঠন করে। এ গহ্বর পরে লাইসোজোমের সাথে মিশে একটি অটোফেজিক গহ্বর-এ পরিণত হলে উক্ত বস্তুগুলোসহ কোষটি পরিপাক হয়ে যায়। তাই বিজ্ঞানী ডুভে লাইসোজোমকে কোষের আত্মঘাতী থলিকা নামে আখ্যায়িত করেছেন।
- লাইসোজোম কোষ বিভাজনে প্রেরণ যোগায়।
- লাইসোজোম কেরাটিন সৃষ্টিতে সাহায্য করে।
- শুক্রাণুর লাইসোজোম নিঃসৃত হায়ালিউরোনিডেজ এনজাইম ডিম্বাণুর আবরণের অংশবিশেষের বিগলন ঘটায়। ফলে ডিম্বাণুর ভেতর শুক্রাণুর ভেতর শুক্রাণুর প্রবেশপথ সৃষ্টি হয়।
লাইসোজোমকে আত্মঘাতী বলা হয় কেন?
লাইসোজোমের ভেতর বিভিন্ন ধরনের এনজাইম থাকে। অনেক সময় তীব্র খাদ্যাভাবে এর প্রাচীর ফেটে যায় এবং আবদ্ধকৃত এনজাইম ভেতর থেকে বের হয়ে কোষের অন্য ক্ষুদ্র অঙ্গগুলোকে ধ্বংস করে ফেলে। এ প্রক্রিয়ায় একসময় সমস্ত কোষটিও পরিপাক হয়ে যেতে পারে। এ কারণে লাইসোজোমকে আত্মঘাতী বলা হয়।