রাসায়নিক পরিবর্তন (একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির রসায়ন ১ম পত্র)

প্রশ্ন-১। রাসায়নিক পরিবর্তন কাকে বলে?

উত্তরঃ যে পরিবর্তনের ফলে এক বা একাধিক বস্তু বা পদার্থ পরিবর্তিত হয়ে সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী নতুন পদার্থে পরিণত হয়, তাকে রাসায়নিক পরিবর্তন বলে। যেমন– লোহায় মরিচা পড়া রাসায়নিক পরিবর্তনের উদাহরণ।

 

প্রশ্ন-২। গতির দিক অনুসারে রাসায়নিক বিক্রিয়া কত ধরনের?

উত্তরঃ গতির দিক অনুসারে রাসায়নিক বিক্রিয়া দুই ধরনের। যথাঃ ১। একমুখী বিক্রিয়া এবং ২। উভমুখী বিক্রিয়া।

 

প্রশ্ন-৩। একমুখী বিক্রিয়া কাকে বলে?

উত্তরঃ যে বিক্রিয়ায় শুধুমাত্র বিক্রিয়ক পদার্থ থেকে উৎপাদ উৎপন্ন হয় তাকে একমুখী বিক্রিয়া বলে। অন্যভাবে বলা যায়– যে বিক্রিয়ার গতি সম্মুখগামী তাকে একমুখী বিক্রিয়া বলে।

 

প্রশ্ন-৪। তাপ রাসায়নিক সূত্র কয়টি?

উত্তরঃ তাপ রাসায়নিক সূত্র দুইটি।

 

প্রশ্ন-৬। সবুজ রসায়ন কী?

উত্তরঃ ক্ষতিকর পদার্থের উৎপাদন এবং ব্যবহার হ্রাসকরণ অথবা বর্জনকল্পে রাসায়নিক উৎপাদ ও রাসায়নিক প্রক্রিয়ার আবিষ্কার, ডিজাইন এবং প্রয়ােগ এর অন্তর্গত।

 

প্রশ্ন-৭। উভমুখী বিক্রিয়া কাকে বলে?

উত্তরঃ যে সমস্ত বিক্রয়াকে সহজেই সম্মুখ এবং পশ্চাৎ উভয় দিকেই ঘটানাে সম্ভব তাদেরকে উভয়মুখী বিক্রিয়া বলা হয়।

 

প্রশ্ন-৮। বিক্রিয়ার হার কাকে বলে?

উত্তরঃ একক সময়ে বিক্রিয়কের ঘনমাত্রা হ্রাস বা উৎপাদের ঘনমাত্রা বৃদ্ধিকে বিক্রিয়ার হার বলা হয়।

 

প্রশ্ন-৯। প্রভাবক কী?

উত্তরঃ যে সমস্ত বস্তু কোনাে রাসায়নিক বিক্রিয়ার গতিবেগ বৃদ্ধি বা হ্রাস করে এবং বিক্রিয়ার শেষে নিজের অপরিবর্তিত থাকে তাদেরকে প্রভাবক বলা হয়।

 

প্রশ্ন-১০। প্রভাবক বিষ কী?

উত্তরঃ যে সমস্ত পদার্থ প্রভাবকের প্রভাবন ক্ষমতা ধ্বংস করে দেয় তাদের প্রভাবক বিষ বলা হয়।

 

প্রশ্ন-১১। সক্রিয়ন শক্তি কাকে বলে?

উত্তরঃ কোনাে বিক্রিয়ায় বিক্রিয়ক পদার্থের অণুগুলাে তাদের গড়শক্তির অধিক সর্বনিম্ন যে অতিরিক্ত পরিমাণ শক্তি অর্জন করলে বিক্রিয়া সম্পন্নের উপযুক্ত হয়, তাকে সক্রিয়ন শক্তি বলে।

 

প্রশ্ন-১২। pH কী?

উত্তরঃ কোনাে দ্রবণের হাইড্রোজেন আয়ন (H+) এর মােলার ঘনমাত্রার ঋণাত্মক লগারিদমকে pH বলা হয়।

 

প্রশ্ন-১৩। বাফার দ্রবণ কী?

উত্তরঃ যে দ্রবণে সামান্য পরিমাণ এসিড ও ক্ষার যােগ করলে দ্রবণের pH অপরিবর্তিত থাকে তাকে বাফার দ্রবণ বলে।

 

প্রশ্ন-১৪। এনথালপি কী?

উত্তরঃ কোনাে সিস্টেমের অভ্যন্তরীণ শক্তির সাথে চাপ ও আয়তনের গুণফলের সমষ্টিকে এনথালপি বলে।

 

প্রশ্ন-১৫। দ্রবণ তাপ কী?

উত্তরঃ যথেষ্ট পরিমাণ দ্রাবকে এক মােল দ্রব দ্রবীভূত করে তাতে যদি আরাে দ্রাবক যােগ করেও তাপীয় অবস্থার পরিবর্তন না ঘটানাে যায় তবে ঐ দ্রবণ প্রস্তুত করতে তাপের যে পরিবর্তন ঘটে তাকে ঐ দ্রবের দ্রবণ তাপ বলা হয়।

 

প্রশ্ন-১৬। পশমন তাপ বা এনথালপি কী?

উত্তরঃ এক গ্রাম তুল্য পরিমাণ এসিডকে এক গ্রাম তুল্য পরিমাণ ক্ষারক দ্বারা বা ক্ষারকে এসিড দ্বারা সম্পূর্ণরূপে প্রশমিত করতে এনথালপির যে পরিবর্তন হয় তাই হচ্ছে প্রশমন তাপ বা এনথালপি।

 

প্রশ্ন-১৭। বন্ধন বিয়ােজন শক্তি কাকে বলে?

উত্তরঃ গ্যাসীয় অবস্থায় কোনাে নির্দিষ্ট প্রকারের এক মােল সংখ্যক বন্ধনকে ছিন্ন করে মূলকে পরিণত করার জন্য যে পরিমাণ শক্তি প্রয়ােগ করতে হয়, তাকে ঐ বন্ধনের বন্ধন বিয়ােজন শক্তি বলে।

 

প্রশ্ন-১৮। হেসের সূত্র কী?

উত্তরঃ যদি আদি ও শেষ অবস্থা স্থির থাকে তবে কোনাে রাসায়নিক বিক্রিয়া দুই বা ততােধিক উপায়ে এক বা অধিক ধাপে সংঘটিত হতে পারে। তবে যে পথই অবলম্বন করা হােক না কেন, মােট বিক্রিয়া তাপ সমান থাকবে।

 

প্রশ্ন-১৯। সমআয়ন প্রভাব কি?

উত্তরঃ সম্পৃক্ত দ্রবণে বিদ্যমান আয়নসমূহের যেকোনো একটির সদৃশ আয়ন বা দ্রবণ যোগ করে দ্রবণটির আয়নিক গুণফল বৃদ্ধি করে দ্রাব্যতা হ্রাস করার প্রক্রিয়াই হলো সমআয়ন প্রভাব।

 

প্রশ্ন-২০। লা-শাতেলিয়ার নীতি কী?

উত্তরঃ কোনো উভমুখী বিক্রিয়া সাম্যাবস্থায় থাকাকালে যদি ঐ অবস্থায় একটি নিয়ামক, যেমন তাপমাত্রা, চাপ বা ঘনমাত্রা পরিবর্তন করা হয়, তবে সাম্যের অবস্থান ডানে বা বামে এমনভাবে পরিবর্তিত হবে যাতে নিয়ামক পরিবর্তনের ফলাফল প্রশমিত হয়। বিক্রিয়ার ক্ষেত্রে এটিই হলো লা-শাতেলিয়ার নীতি।

 

প্রশ্ন-২১। এনজাইম প্রভাবন (Enzyme Catalysis) বলতে কী বোঝায়?

উত্তরঃ এনজাইমের প্রভাবে যে প্রভাবন ক্রিয়া সংঘঠিত হয় তাকে এনজাইম প্রভাবন বলা হয়। জীবদেহের অনেক জটিল রাসায়নিক বিক্রিয়া এনজাইমের প্রভাবে অনুষ্ঠিত হয়। যা অন্য কোনো প্রভাবক দ্বারা সম্ভব হয় না। এনজাইম হচ্ছে জীবন্ত কোষ হতে সৃষ্ট উচ্চ আণবিক ভর বিশিষ্ট অদানাদার, নাইট্রোজেনপূর্ণ রহস্যময় জটিল জৈব যৌগ। এনজাইমসমূহ এক ধরনের প্রোটিন অণু যা জীবন্ত কোষের জটিল জৈব বিক্রিয়া ত্বরান্বিত করে।

 

সকল রাসায়নিক বিক্রিয়া সাম্যাবস্থার দিকে ধাবমান– ব্যাখ্যা কর।

উত্তর : কোনো উভমুখী বিক্রিয়ার ক্ষেত্রে, শুরুতে বিক্রিয়ার হার/গতিবেগ বেশি থাকলেও সময় বাড়ার সাথে সাথে বিক্রিয়কের পরিমাণ কমতে থাকায় সম্মুখ বিক্রিয়ার গতিবেগ ক্রমশ হ্রাস পেতে থাকে এবং উৎপন্ন দ্রব্যের ঘনমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে পশ্চাৎমুখী বিক্রিয়ার গতিবেগ বাড়তে থাকে। সম্মুখ বিক্রিয়ার গতিবেগ কমতে থাকে এবং পশ্চাৎ বিক্রিয়ার গতিবেগ বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে উভয় বিক্রিয়ার গতিবেগ সমান হয় এবং সাম্যাবস্থা অর্জিত হয়। সুতরাং দেখা যায় যে, সকল উভমুখী বিক্রিয়ার লক্ষ্য হলো সাম্যাবস্থা অর্জন।

 

মানুষের রক্তে pH ভারসাম্য নষ্ট হলে কী সমস্যা হতে পারে?

উত্তরঃ ১। মানুষের শারীরবৃত্তীয় কাজে অত্যাবশ্যকীয় এনজাইমসমূহ pH সংবেদনশীল, রক্তের সঠিক pH এনজাইম এর ক্রিয়াকৌশলকে নিয়ন্ত্রণ করে।

২। pH এর ভারসাম্য নষ্ট হলে প্রোটিনের ত্রিমাত্রিক কাঠামো ভেঙে যেতে পারে।

৩। pH তারতম্যে রক্তে ইনসুলিন ভারসাম্য নষ্ট হলে তা মস্তিষ্কে চাপ প্রয়োগ করতে পারে।

৪। রক্তে pH কমে গেলে তা হৃৎপিন্ডের ব্লক সংগঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে, কারণ সেক্ষেত্রে ফ্যাটি এসিড ধনাত্মক চার্জ বিশিষ্ট হয়ে যায় এবং তা শিরার ঋণাত্মক চার্জবিশিষ্ট দেয়ালে আটকে পড়ে, হৃৎপিন্ডে ব্লক তৈরি করে।