মিয়োসিস কি? মিয়োসিসকে হ্রাসমূলক বিভাজন বলা হয় কেন?

মিয়োসিস কি? (What is Meiosis in Bengali/Bangla?)

মিয়োসিস (Meiosis) হলো জনন মাতৃকোষের বিভাজন পদ্ধতি। যে কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় মাতৃকোষের নিউক্লিয়াস দুবার এবং ক্রোমোজোম একবার বিভক্ত হয় ফলে অপত্য কোষে ক্রোমোজোমের সংখ্যা মাতৃকোষের ক্রোমোজোমের তুলনায় অর্ধেক হয়ে যায়, তাকে মিয়োসিস বলে। একে হ্রাসমূলক কোষ বিভাজনও বলা হয়। মিয়োসিস কোষ বিভাজনকে দুটি পর্বে ভাগ করা হয়৷ যথা– মিয়োসিস-১ এবং মিয়োসিস-২।

মিয়োসিস কোষ বিভাজনের কারণে বংশানুক্রমে ক্রোমোজোমের সংখ্যা ধ্রুব থাকে।

 

মিয়োসিস কোষ বিভাজনের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Meiosis cell division)

  • এটি জীবের জনন মাতৃকোষে ঘটে থাকে।
  • মাতৃকোষটি বিভাজিত হয়ে চারটি অপত্য কোষের সৃষ্টি হয়।
  • অপত্য কোষে ক্রোমোসোম সংখ্যা মাতৃকোষের ক্রোমোসোম সংখ্যার অর্ধেক হয়।
  • এ প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট অপত্য কোষ জনন কোষ হিসেবে জীবের যৌন জননে অংশ নেয়।
  • মিয়োসিসে নিউক্লিয়াস দুবার এবং ক্রোমোসোম একবার বিভক্ত হয়।

 

মিয়োসিস প্রয়োজন কেন?

প্রজাতির স্বকীয়তা রক্ষার জন্য মিয়োসিস বিভাজন প্রয়োজন। মিয়োসিস প্রক্রিয়ায় জননকোষ সৃষ্টি হয় এবং কোষে ক্রোমোজমের সংখ্যা ধ্রুব থাকে। এ ছাড়া জীবজগতে বৈচিত্র্য সৃষ্টির জন্য মিয়োসিস প্রয়োজন। ডিপ্লয়েড জীবে মিয়োসিস প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই গ্যামেট সৃষ্টি হয়। আর গ্যামেটের মিলনের মাধ্যমে যৌন প্রক্রিয়ায় বংশবৃদ্ধি ঘটে।

 

মিয়োসিসকে হ্রাসমূলক বিভাজন বলা হয় কেন?

মিয়োসিস কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় একটি প্রকৃত কোষ বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিভক্ত হয়ে চারটি অপত্য কোষে পরিণত হয়। এ প্রক্রিয়ায় কোষের নিউক্লিয়াস দু’বার এবং ক্রোমোজোম একবার বিভক্ত হয়, ফলে অপত্য কোষে ক্রোমোজোম সংখ্যা মাতৃকোষের ক্রোমোজোম সংখ্যার অর্ধেক হয়ে যায়। এ বিভাজনে অপত্য কোষের ক্রোমোজোম সংখ্যা অর্ধেক হ্রাস পায় বলে এ প্রক্রিয়াকে হ্রাসমূলক বিভাজন বলে।

 

জীবজগতে মিয়োসিস প্রক্রিয়া

জীবজগতের জন্য মিয়োসিস প্রক্রিয়াটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যৌন জননক্ষম জীবে মিয়োসিসের ফলে জননকোষ তৈরি হয়। জননকোষের মিলনের মাধ্যমে যৌন জনন সম্পন্ন হয় এবং এরা বংশবৃদ্ধি ঘটায়। মিয়োসিস না ঘটলে এসকল জীবের বংশবৃদ্ধি অসম্ভব। আবার মিয়োসিসের কারণেই প্রত্যেকটি জীবে ক্রোমোসোম সংখ্যা নির্দিষ্ট থাকে এবং বংশানুক্রমে তা সন্তান-সন্তাতিতেও অপরিবর্তিত থাকে। মিয়োসিসের মাধ্যমে ক্রসিং ওভারের কারণে ক্রোমোসোম জিনের বিনিময় ঘটে। এর ফলে জীব প্রজাতিতে বৈচিত্র্যতা দেখা যায়। সুতরাং মিয়োসিস না ঘটলে যেহেতু যৌন জননক্ষম জীবে যৌন জনন ঘটত না বা তাদের বংশবৃদ্ধি ঘটত না, সেহেতু প্রকৃতি থেকে এসকল জীব বিলুপ্ত হয়ে যেত।

আবার মিয়োসিস না ঘটলে প্রতি বংশধরে ক্রোমোসোম সংখ্যা দ্বিগুণ হারে বৃদ্ধি পেতে থাকত৷ এতে জীবজগতে একটি আমূল পরিবর্তন ঘটতে পারত যা জীবজগতের জন্য হুমকি স্বরূপ। প্রকৃতিতে যে বিচিত্র রকমের জীব রয়েছে তা মিয়োসিসেরই অবদান। মিয়োসিস না ঘটলে বিচিত্র রকমের জীবের জন্ম হতো না এবং বিভিন্ন পরিবেশে তারা অভিযোজন করে বেঁচে থাকতে পারতো না। অতএব, এক কথায় বলা যায় যে জীবের দেহে সংঘটিত মিয়োসিস কোষ বিভাজন প্রক্রিয়া জীবজগতকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করে।

 

মাইটোসিস ও মিয়োসিস কোষ বিভাজনের মধ্যে পার্থক্য কি? (What is the difference between mitosis and meiosis cell division?)

নিম্নে মাইটোসিস ও মিয়োসিস কোষ বিভাজনের মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরা হলো—

মাইটোসিস

১. মাইটোসিস কোষ বিভাজন দেহকোষে ঘটে।

২. এই বিভাজনে নিউক্লিয়াস ও ক্রোমোজম একবার করে বিভক্ত হয়।

৩. এই কোষ বিভাজনে দুটি অপত্য কোষ সৃষ্টি হয়।

৪. মাইটোসিসে সৃষ্ট প্রতিটি অপত্য কোষে ক্রোমোজম সংখ্যা মাতৃকোষের সমান থাকে।

মিয়োসিস

১. মিয়োসিস কোষ বিভাজন জনন মাতৃকোষে ঘটে।

২. এই বিভাজনে নিউক্লিয়াস দুইবার ও ক্রমোজম একবার বিভক্ত হয়।

৩. এ ধরনের কোষ বিভাজনে একটি কোষ থেকে চারটি কোষের সৃষ্টি হয়।

৪. মিয়োসিসে সৃষ্ট প্রতিটি অপত্য কোষে ক্রোমোজম সংখ্যা মাতৃকোষের অর্ধেক হয়।

 

মিয়োসিস সম্পর্কিত আরও প্রশ্ন ও উত্তর

১। মিয়োসিসে জনন মাতৃকোষ কয় ধাপে বিভাজিত হয়?

উত্তর : দুই।

২। কোন প্রক্রিয়ায় মাতৃকোষের নিউক্লিয়াসটি মাত্র একবার বিভাজিত হয়?

উত্তর : মাইটোসিস।

৩। সাধারণত কয়টি জননকোষ মিলিত হয়ে একটি জাইগোট গঠন করে?

উত্তর : দুই

৪। কয়টি হ্যাপ্লয়েড কোষের মিলনের ফলে ডিপ্লয়েড অবস্থা সৃষ্টি হয়?

উত্তর : ২টি।

৫। জীবের জনন কোষ সৃষ্টির সময় জনন মাতৃকোষে কোন বিভাজন ঘটে?

উত্তর : মিয়োসিস।

৬। বৃদ্ধি ও অযৌন জননের জন্য কোন কোষ বিভাজন অপরিহার্য?

উত্তর : মাইটোসিস।

৭। দুটি হ্যাপ্লয়েড কোষের মিলিত অবস্থাকে কী বলে?

উত্তর : ডিপ্লয়েড।

৮। জাইগোটের ক্রোমোজোম সংখ্যার অবস্থা কীরূপ?

উত্তর : ডিপ্লয়েড।

৯। মিয়োসিস কোষ বিভাজনে মাতৃকোষ ও অপত্য কোষের ক্রোমোজম সংখ্যার অনুপাত কত?

উত্তর : ১ : ৪।