ফুসফুস হচ্ছে শ্বসনতন্ত্রের অন্যতম প্রধান অঙ্গ। ফুসফুসের বায়ুথলি বা অ্যালভিওলাসে পরিবেশের O2 জমা হয় যা রক্তের মাধ্যমে দেহ কোষে পৌঁছায়। আবার এখানে রক্ত হতে আগত কার্বন ডাই-অক্সাইডও জমা হয় যা শ্বাসনালি ও নাসারন্ধ্রের মাধ্যমে পরিবেশে নির্গত হয়।
ফুসফুসের কাজ
ফুসফুসের কাজ নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
- ফুসফুসের সাহায্যে প্রাণী পরিবেশ থেকে অক্সিজেনযুক্ত বায়ু গ্রহণ করে দেহে জৈবনিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে।
- জৈবনিক প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন বিষাক্ত কার্বন ডাইঅক্সাইড ফুসফুস দেহ থেকে বের করে দিতে সাহায্য করে।
প্লুরা : ফুসফুস যে পর্দা দ্বারা আবৃত তাকে প্লুরা বলে। প্লুরার দুই ভাঁজের মধ্য থেকে নির্গত রস শ্বাসক্রিয়া চলার সময় ফুসফুসের সাথে বক্ষগাত্রের ঘর্ষণ থেকে ফুসফুসকে রক্ষা করে।
ফুসফুসের ক্যান্সার
সব ধরনের ক্যান্সারের মধ্যে ফুসফুস ক্যান্সারের প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি। আমাদের দেশে পুরুষের ক্যান্সারজনিত মৃত্যুর প্রধান কারণ ফুসফুস ক্যান্সার।
ফুসফুস ক্যান্সারের অন্যতম প্রধান কারণ ধূমপান।
- বায়ু ও পরিবেশ দূষণ এবং বাসস্থান অথবা কর্মক্ষেত্রে দূষণ ঘটতে পারে এমন সব বস্তুর (যেমন: এ্যাসবেস্টাস, আর্সেনিক, ক্রোমিয়াম, নিকেল, কঠিন ধাতুর গুঁড়া ইত্যাদি) সংস্পর্শে আসার কারণে ফুসফুসে ক্যান্সার হয়।
- যক্ষ্মা বা কোনো ধরনের নিউমোনিয়া ফুসফুসে এক ধরনের ক্ষত সৃষ্টি করে যা পরবর্তীতে ক্যান্সারে রূপান্তরিত হয়।
লক্ষণ : ফুসফুস ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণগুলো যত দ্রুততার সাথে নির্ণয় করা যায় এবং চিকিৎসা প্রদান করা যায়, তত বেশি দিন বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। প্রাথমিক অবস্থায় যেসব লক্ষণ প্রকাশ পায় সেগুলো হলো:
- দীর্ঘদিন ধরে খুসখুসে কাশি ও বুকে ব্যথা।
- ভগ্নস্বর, ওজন হ্রাস এবং ক্ষুধামান্দ্য।
- হাঁপানি, ঘনঘন জ্বর হওয়া।
- বারবার ব্রংকাইটিস বা নিউমোনিয়া দিয়ে সংক্রমিত হওয়া।
রোগ নির্ণয় : প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সারের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য থুথু বা শ্লেষা বিশ্লেষণ করা, বুকের এক্স রে, সিটি স্ক্যান, এমআরআই ইত্যাদি করতে হয়। চূড়ান্ত রোগনির্ণয়ের জন্য সাধারণত সাইটো ও হিস্টোপ্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা করতে হয়।
প্রতিকার :
- রোগের লক্ষণগুলো দেখা গেলে অনতিবিলম্বে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া।
- রোগ নির্ণয়ের পর ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা।
- প্রয়োজনে রেডিয়েশন থেরাপি প্রয়োগ করা, যেখানে তেজস্ক্রিয় বিকিরণের মাধ্যমে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করা হয়।
প্রতিরোধ : বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্যান্সার প্রতিরোধে নিম্নলিখিত ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে, যথা:
- ধূমপান ও মদ্যপান না করা।
- অতিরিক্ত চর্বিজাতীয় খাদ্য না খাওয়া।
- নিয়মিত ব্যায়াম করা।
- পরিমাণমতো শাকসবজি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা।