‘কম্পিউটার’ আধুনিক বিজ্ঞানের বিস্ময়কর আবিষ্কার। আধুনিককালকে কম্পিউটারের কালও বলা যায়। কম্পিউটার (Computer) শব্দটি গ্রীক শব্দ ‘Compute’ থেকে উৎপত্তি হয়েছে। Compute শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো গণনাকারী বা হিসাবকারী। অন্যদিকে ল্যাটিন শব্দ কমপুটেয়ার (Computare)-এর অর্থ গণনা করা বা নির্ণয় করা। অর্থাৎ কম্পিউটার শব্দটির আভিধানিক অর্থ হচ্ছে গণনাকারী বা হিসাবকারী যন্ত্র।
কম্পিউটার (Computer) এমন একটি ইলেকট্রনিক গণনাকারী যন্ত্র যা তথ্য গ্রহণ করে এবং বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তা বিশ্লেষণ এবং উপস্থাপন করে। ব্যবহারকারী কোনো ডেটা বা উপাত্ত কম্পিউটারে সরবরাহ করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কম্পিউটার তা প্রক্রিয়াকরণ (প্রসেসিং) করে কাজের ফলাফল প্রদান করে।
কম্পিউটারের সাহায্যে মূলতঃ যােগ, বিয়ােগ, গুণ, ভাগ ইত্যাদি কাজ করা যায়। কিন্তু বর্তমান যুগে কম্পিউটারের বহুমুখী ব্যবহারের ফলে কম্পিউটারের সংজ্ঞা অনেক ব্যাপকতা লাভ করেছে। কোন সীমিত সংজ্ঞা দিয়ে আর কম্পিউটারকে গন্ডীবদ্ধ করা যায় না। কম্পিউটার সেকেন্ডের মধ্যে কোটি কোটি হিসাব-নিকাশ করতে পারে। কম্পিউটারে কাজের গতি হিসাব করা হয় ন্যানোসেকেন্ডে। ন্যনোসেকেন্ড হচ্ছে এক সেকেন্ডের একশত কোটি ভাগের একভাগ সময় মাত্র। কম্পিউটারের ভিতরে অনেক বর্তনী থাকে। ইলেকট্রন প্রবাহের মাধ্যমে কম্পিউটারের যাবতীয় কাজকর্ম পরিচালিত হয়। ইলেকট্রনিক সংকেতের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে কম্পিউটার ল্যাংগুয়েজ বা কম্পিউটারের ভাষা। কম্পিউটারের বোধগম্য এ ভাষার মাধ্যমে কম্পিউটারে যে নির্দেশ দেয়া হয় তারই ভিত্তিতে কম্পিউটার ফলাফল প্রদান করে। কম্পিউটারের এ নির্দেশাবলিকে বলা হয় প্রোগ্রাম। প্রোগ্রাম ছাড়া কম্পিউটার একটি জড় পদার্থ ভিন্ন আর কিছু নয়। উপযুক্ত প্রোগ্রামের ফলে কম্পিউটার জড় পদার্থ হতে গাণিতিক শক্তিসম্পন্ন বুদ্ধিমান যন্ত্রে পরিণত হতে পারে।
কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Computer)
নিচে কয়েকটি কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হলো–
১. দ্রুতগতি ( High Speed ) : প্রতিদিন কাজের সময় পরিমাপের জন্য আমরা ঘণ্টা, দিন, মাস ও বছর ইত্যাদি ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু এর কার্যনির্বাহের গতি এত বেশি যে, সময় পরিমাপের জন্য দরকার মিলি সেকেন্ড, মাইক্রো সেকেন্ড, ন্যানো সেকেন্ড, পিকো সেকেন্ড ইত্যাদি ক্ষুদ্র হতে ক্ষুদ্রতর সময়ের এককসমূহ। সুতরাং, সময় পরিমাপের একক হতে সহজেই অনুমান করা যায় এর কাজের গতি কত বেশি। একটি সাধারণ যোগ বা বিয়োগ করতে এর ৫০ ন্যানো সেকেন্ড (এক সেকেন্ডের একশ কোটি ভাগের এক ভাগ) সময় লাগে। মেশিনটি প্রতি সেকেন্ডে ঐ রকম দু’কোটি যোগ বা বিয়োগ করতে সক্ষম। অতএব, কম্পিউটারের গতির তুলনায় মানুষের গাণিতিক কাজের গতি অত্যন্ত কম।
২. নির্ভুলতা (Correctness) : কম্পিউটার একটি মেশিন। মানুষের দেয়া সূত্র ও যুক্তির মাধ্যমে কম্পিউটার ফলাফল প্রদান করে। কম্পিউটার কখনও ভুল করে না। কম্পিউটারের নির্ভুলতা শতকরা ১০০ ভাগ।
৩. সূক্ষ্মতা (Accuracy) : কম্পিউটারের স্মৃতিশক্তি অনেক বেশি। তাই অনেক ঘর পর্যন্ত নির্ভুলভাবে গাণিতিক কাজ করতে পারে। এ কারণে কম্পিউটারের সূক্ষ্মতা অনেক বেশি ধরে নেয়া যায়।
৪. বিশ্বাসযােগ্যতা (Reliability) : কম্পিউটার নির্ভুল ও সূক্ষ্মভাবে কাজ করে। কাজ করার জন্য কম্পিউটার মানুষের দেয়া নির্দেশ ব্যবহার করে। কম্পিউটার ভুল করে না কিন্তু মানুষ করে, এটা প্রমাণিত।
৫. ক্লান্তিহীনতা (Dilligence) : কম্পিউটার একটি যন্ত্র। আর এ যন্ত্রের একটি স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ক্লান্তিহীনতা। কম্পিউটার রাত দিন ক্লান্তিহীন, বিরক্তিহীন এবং বিশ্রামহীনভাবে কাজ করতে পারে।
৬. স্মৃতিশক্তি (Memory) : কম্পিউটারের নিজস্ব স্মৃতিশক্তি (Memory) আছে। কম্পিউটারের মেমােরিতে নির্দেশ (প্রােগ্রাম), প্রয়ােজনীয় ডেটা এবং প্রক্রিয়াজাত ফলাফল (ইনফরমেশন) সংরক্ষিত করে রাখা যায়।
৭. স্বয়ংক্রিয়তা (Automation) : কম্পিউটার স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করতে পারে। এ কারণে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে মানুষের পরিবর্তে কম্পিউটারকে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া আরাে অনেক ক্ষেত্রে যেমন, কল-কারখানায়, বিস্ফোরক গবেষণায় কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়।
৮. যুক্তিসংগত সিদ্ধান্ত (Logical Decision) : বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবস্থা বিচার করে কী কাজ করতে হবে তার আগাম নির্দেশ দিয়ে রাখলে যুক্তিসংগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিভিন্ন কাজ কম্পিউটার নিজে নিজে করতে পারে।
৯. ব্যবহারের বহুমুখিতা (Versatility) : বহুমুখী কাজে কম্পিউটারকে ব্যবহার করা যায়। কম্পিউটার একটি প্রােগ্রামনির্ভর যন্ত্র। যখন যে প্রোগ্রাম কম্পিউটারে লােড করা থাকে সে প্রােগ্রাম অনুসরণ করে কম্পিউটার কাজ করতে পারে। একটি কম্পিউটারে যেমন হিসাব-নিকাশের প্রােগ্রাম ব্যবহার করে হিসাব-নিকাশ করা যায় আবার মাল্টিমিডিয়া সফটওয়্যার ব্যবহার করে ছবি দেখা যায় বা গান শােনা যায়।
১০. অসীম জীবনসীমা (Endcess Life) : কম্পিউটার চালানাে হয় প্রােগ্রাম ব্যবহার করে। মানুষের জীবনের যেমন একটি নির্দিষ্ট সময় আছে কিন্তু গােগ্রামের কোন নির্দিষ্ট জীবনসীমা নেই। মানুষের তৈরি প্রোগ্রাম বছরের পর বছর সমান যােগ্যতায় একই মানে কাজ করে যেতে পারে। দীর্ঘদিন কাজ করার পরও প্রােগ্রামের কোন মানের কমতি হয় না।
কম্পিউটারের কাজ (Function of Computer)
কম্পিউটারের গুরুত্বপূর্ণ কাজগলো নিচে তুলে ধরা হলাে–
১. ডাটা গ্রহণ : কী-বাের্ড (Keyboard), মাউস (Mouse), জয়স্টিক (Joystick), ডিস্ক, স্ক্যানার, গ্রাফিক্স, ট্যাবলেট, OCR, OMR, ডিজিটাল ক্যামেরা ইত্যাদির মাধ্যমে কম্পিউটার ডেটা (Data) গ্রহণ করে থাকে।
২. প্রোগ্রামের কাজ সম্পাদন : প্রোগ্রামের চাহিদামত বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য ব্যবহারকারী দ্বারা বিভিন্ন উপাত্ত গ্রহণ করে কম্পিউটার মেমোরিতে ধারণ ও সংরক্ষণ করে এবং প্রোগ্রামের নির্দেশ মত প্রোগ্রামের কাজ সম্পন্ন করে।
৩. কমান্ড অনুযায়ী ফলাফল : কম্পিউটার তার ব্যবহারকারীর কমান্ড অনুযায়ী ফলাফল প্রদান করে থাকে। ব্যবহারকারী উপাত্ত থেকে চাহিদা অনুযায়ী কমান্ড দিলে সে অনুসারে ফলাফল প্রদান করে থাকে।
৪. ডাটা প্রসেস করা : কম্পিউটার গ্রহণ করা ডাটাকে প্রসেস করে থাকে। ডাটা প্রসেস করা কম্পিউটারের প্রধান ও অন্যতম কাজ।
৫. আউটপুট প্রদান : মনিটর (Monitor), প্রিন্টার (Printer), ডিস্ক ইত্যাদির মাধ্যমে কম্পিউটার ফলাফল প্রকাশ করে।
কম্পিউটার দিয়ে কাজ করার সুবিধা
কম্পিউটার দিয়ে কাজ করার অনেক সুবিধা পাওয়া যায়। যথা-
- কম্পিউটার খুব দ্রুত গতিতে কাজ করতে পারে।
- নির্ভুল ফলাফল পাওয়া যায়।
- মেমোরিতে অনেক তথ্য সেভ করে রাখা যায় এবং খুব তাড়াতাড়ি কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়।
- স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করে থাকে।
- যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
- ডেটা প্রসেসিং এর মাধ্যমে ডেটা বিশ্লেষণ করতে পারে।
- একই কম্পিউটার বহু ধরনের কাজ করতে পারে।
- কল্পনাহীনভাবে টানা দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করতে পারে।